স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় একদিনের সৃষ্টি নয়। তার অনেক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ১৯৪৭ সালের পর বৃটিশ দের থেকে দেশ বিভক্তির পর কায়েদি আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তার এক ভাষনে বলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা কিন্তু বাংলার দামাল ছেলেরা তখন এক বাক্যে না না বলে প্রতিবাদ করেন।
১৯৫২ সালের এ দিনে ভাষার দাবীতে বাংলার দামাল ছেলেরা বজ্র কন্ঠে আওয়াজ তুলেন রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই। তখনই পাকিস্তানী হায়েনা শাসক গোষ্ঠী বাংলার ছাত্রদের উপর চালায় নির্জাতন। ২১শে ফেব্রুয়ারীর এ দিনে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই এর দাবীতে মিছিল বের করেন। মিছিলে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর পুলিশ বাহিনী অতর্কিত গুলি বর্ষন করে। সেদিন জীবন বাজি রেখে যারা সামনে এগিয়ে ছিলেন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত সহ নাম না জানা আরও কত তাজা প্রান।
অবশেষে আমরা পেলাম মাতৃভাষা এবং এ ভাষায় কথা বলার অধিকার। আজ তাই প্রথম ঘণ্টাতেই তাদের স্মরণ করা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একুশের প্রথম প্রহর থেকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে মহান ভাষা শহীদদের। মধ্যরাতের পর মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে মন্ত্রীবর্গ ও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এর পরেই সরকারের অন্যান্য উচ্চ পদস্ত ব্যাক্তিবর্গ সহ জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মিনার সবার জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপরই ঢল নামে সাধারণ মানুষের। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল হাতে সারি বেঁধে এগিয়ে যান শহীদ বেদির দিকে।
শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা গতকাল থেকেই ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা। কয়েকটি সড়কে রাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ মিনার চত্বরে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা। এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সঙ্গে সারা দেশের শহীদ মিনারগুলোতেও একুশের প্রথম প্রহর থেকে চলে শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা।
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের হাতে একুশে পদক তুলে দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে আজকের দিনটি কেবল বাংলাদেশে নয় বিশ্বের সব প্রান্তে পালিত হচ্ছে বীরের রক্তস্রোত আর মায়ের অশ্রুভেজা অমর একুশে।