বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। জুলাই গণ-গণঅভ্যুত্থানের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী হওয়ায় মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঘোষিত সোমবারের রায়কে “একটি ঐতিহাসিক রায়” বলে মন্তব্য করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে দণ্ডাদেশ দিয়েছেন, তাতে আবারও প্রমাণিত হয়েছে যে ক্ষমতার অবস্থান যা-ই হোক, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
দণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানকে বাংলাদেশের সরকারের কাছে হস্তান্তর করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাদেরকে ফেরত আনতে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও চিঠি পাঠানো হবে বলে সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারত বলেছে, তারা বাংলাদেশের শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভূক্তি এবং স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে সব সময় সকল অংশীজনদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছে দেশটির সরকার।
শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী মোহাম্মদ আমির হোসাইন বলছেন, তিনি রায়ে “কষ্ট পেয়েছেন এবং ব্যথিত হয়েছেন” তবে রায়ের বিবরন দিতে গিয়ে তিনি হাসেন উপস্থিত সাংবাদিক সকলে তার কষ্টের মধ্যে হাসিকে উপহাস হিসাবে দেখছেন। তবে শেখ হাসিনা আত্মসমর্পন না করলে কিংবা গ্রেফতার না হলে রায়ের বিপক্ষে আপিল আবেদন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, শেখ হাসিনার যে বিচার হয়েছে তা অপরাধের তুলনায় যথেষ্ট নয়, কিন্তু এটি শুধু অতীতের বিচার নয় বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি শিক্ষা।
জামায়াতে ইসলামী বলেছে, ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার ছিলো ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার আর আজকের বিচার হলো যথার্থ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও প্রশ্নাতীত একটি বিচার।
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে একমাসের মধ্যে আদালতের রায় কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে আগেই ‘কমপ্লিট লকডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে রবিবার রাতেও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ, বাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন এবং মশাল মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকায় সারাদিন অনেক কম যানবাহন চলেছে। ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে। আদালত চত্বরে ছিল সেনাপ্রহরা। উল্লেখ্য ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে পালিয়ে গেছেন এবং দিল্লিতে অবস্থান করছেন


